গোড়ায় গলদ
Posted on February 7, 2021 • 3 minutes • 628 words
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | টেকনাফ, কক্সবাজার
একরাশ মাথাব্যাথা, মনের অজস্র চিন্তাভাবনা আর আধো আধো ঘুম যখন বাস থামার কারণে চলে গেল, তখন বুঝতে পারলাম বাস টেকনাফ পৌঁছে গেছে। বাস থেকে বের হয়ে বোতলের পানি চোখে মুখে ছিটিয়ে এবং পেটে কিছুটা চালান করে ফোন বের করে দেখলাম, রাত সোয়া ৫টার মত বাজে। রাত পৌনে আটটার বাস এত কম সময়ে এসে টেকনাফ নামিয়ে দিয়ে যাবে, ভাবিও নি।
নাস্তার হোটেলগুলো গতিশীল, পরোটা - তন্দুররুটি বেলেই চলছে। নাস্তাকার্য সেরে এবং ফিরতি বাস টিকেট কাটার পর কিছু সময় কাটলো রাস্তায়, পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হলো, কথা হলো। কিভাবে যেন রাত সোয়া পাঁঁচটা আর সকাল পৌনে নয়টার ব্যবধান চুকে গেল। আমরা সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া কেয়ারি সিন্দবাদ লঞ্চে উঠলাম। ওপেন ডেকে সিট নেয়া আফনানের ভাল ডিসিশন ছিল। খোলামেলে চারপাশ, মৃদূ ঠান্ডা বাতাস, রোদের উষ্ণতা আর একঝাক গাংচিলের দলবল দেখতে দেখতে দেড় ঘন্টা কেটে গেল। বসে বসে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম, মনে পড়লো না।
আমার ঘুম যখন ভাঙ্গলো, তখন সেন্ট মার্টিনের একদম কাছাকাছি এসে পড়লাম, দশ মিনিটের মধ্যে জাহাজ জেটিতে এসে ভিড়লো, আমরা হালকা সময়ের ব্যবধানে নামলাম। এবার পালা বুকিং দেয়া রিসোর্ট খুজে বের করা। গুগল ম্যাপ আর দুটি পায়ের সাহায্যে হেটে হেটে আধ-ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে রিসোর্টে উঠলাম, জিনিসপত্র রেখে দুপুরের খাবারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
হোটেল থেকে বেশিদূর যেতে হল না, কাছাকাছি একটা হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিলাম- সুন্দরী মাছ, আলুভর্তা, সবজি মিক্স, ডাল আর সালাদ দিয়ে। একটা জিনিস এর জ্ঞান হলো- সেন্ট মার্টিনে একটু দামাদামি করলেই খাবারের দাম অনেক কমানো সম্ভব হয়ে যায়। খাবারের পর রিসোর্টের পেছনের বীচে গেলাম গোসল করতে। খুবই প্রশস্ত বীচ আর বেশি লোকজনও বেশি নেই, যা আশা করেছিলাম।
সমুদ্র জলে গোসল করে কিছুক্ষন সাইকেল চালালাম, টক-ঝাল মিক্স গোলা আইস্ক্রিম খেলাম - খুবই ইউনিক টেস্ট, না খেলে মিস যেতো। কিছুক্ষণ বীচসাইডের বাজারে ঘোড়াঘুড়ি করার পর কিছু কুকুরের দেখা মিললো, এতটা প্রাণবন্ত হবে কুকুরগুলো, আগে ভাবি নাই। তার কিছুক্ষণ পরেই রিসোর্টে ফিরে আসলাম, রুম লক করে, চাবি পকেটে ভরে বের হলাম ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্যে। প্রথমে বাজার, তারপর জেটিতে গিয়ে পৌছলাম, রাতের জেটির ধারের বীচ সুন্দর লাগে অবশ্য। সেখানে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে আবার বাজারের দিকে রওনা দিলাম।
বাজারে হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে - স্যামন, টুনা, রূপচান্দা, কালাচান্দা, লবস্টার ইত্যাদি। কেনার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও দামাদামি করলাম, ধরে দেখলাম মাছ গুলো আদৌ ভাল কি না। রাতের খাবারের যখন সময় হলো একের পর এক রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম, বিরাট মেন্যু থাকার পরেও যখন অর্ডার দেয়া হয়, বলে এটা নেই সেটা নেই। অগত্যা রেস্টুরেন্ট ছেড়ে বের হতে হল আমাদের।
শেষ পর্যন্ত একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম, আমার ভারী কিচছু খাবার ইচ্চছা না থাকা সত্ত্বেও বসলাম বাকিদের সাথে। দামাদামির পরে বাকিদের স্যামন মাছও যখন পছন্দ হলো, অর্ডার দেয়া প্রায় নিশ্চিত - ঠিক তখনই পাশের টেবিলে বসা একদল বয়স্ক মহিলারা বলে উঠলেন যে, মাছটা নাকি পচা। আমাদের আর বোঝা বাকি রইলো না যে, ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা আস্ত একটা স্যামন মাছ যে কেও এমনি এমনি ১২০ টাকায় দিয়ে দেয় না। আসার দিন ছবিটা তুলে নিলাম, যদি কারো সাহায্য হয়।
আবারো বের হলাম সেই রেস্টুরেন্ট থেকে, পরবর্তী রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম, অর্ডার দিলাম, তৃপ্তি নিয়ে সবাই খেলাম। খাবারের বিল মেটানোর পর যখন আনমনে পকেটে হাত দিলাম, আমার মুখ শুকিয়ে গেল। সবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আফনান, পকেটে চাবি খুজে পাইতেসি না
অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম, কোথায় হারাতে পারে, কতক্ষণ হইলো হারানোর, কোন কোন রেস্টুরেন্টে গিয়েছি, জেটির অন্ধকারে হারাইলো কি না, আজকে রাত কি রিসোর্টের হ্যামকে শুয়েই রাত কাটাতে হবে কি না, রিসোর্টের ম্যানেজারের কাছে অবশ্যই আরেকটা চাবি পাওয়া যাবে। এসব ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম আগে রিসোর্ট যাই, কথা বলে দেখা যাবে। যদি চাবি পাওয়া না যায়, আরেকবার পুরো পথ নাহয় তন্ন তন্ন করে খুজে দেখবো - রাত এখনো অনেক বাকি আছে।
রিসোর্ট পৌঁছে যখন ম্যানেজারকে খুজে পাওয়া গেল না, আফনান তখন ফোন দিল উনাকে। আমি রুমের সামনে পায়চারি করছি আর চিন্তা করছি। হঠাৎ চিন্তা আসলো, যদি গোড়াতেই ভুল হয়ে থাকে? আর ঠিক তখনই বালুর মধ্যে দেখতে পেলাম আমাদের রুমের চাবি। বালু থেকে তুলে যখনই বাকিদের দেখালাম, তখনই বলে উঠলাম - “রাখে আল্লাহ, মারে কে”